Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ইতিহাস থেকে বর্তমান

১। আনসার বাহিনী : আনসার শব্দটি আরবী, যার বাংলা সাহায্যকারী ইসলাম ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আনসারকে ইসলামের সাহায্যকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অর্থাৎ আনসার বলতে ইসলামের সাহায্যকারী ব্যক্তিকে বুঝি এবং আনসার বাহিনী বলতে ইসলামের সাহায্যকারী একটি বাহিনীকে বুঝায় তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আনসার বাহিনী বলতে আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আত্মনিবেদিত একটি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীকে বুঝি।

তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে তদানীন্তন 'পূর্ববাংলা আইন সভা' একটি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীর মর্যাদায় ১৯৪৮ সালে আনসার আইন প্রণয়ন করেন, যা ১৭ জুন ১৯৪৮ তারিখের ঢাকা গেজেটে (অতিরিক্ত সংখ্যা হিসেবে) প্রকাশিত হয়। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধকালে দেশের সীমান্ত ফাঁড়ি গুলোতে আনসারদের প্রতিরক্ষা দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়।

বাহিনী বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে আনসার বাহিনী আইন ১৯৯৫ এবং ব্যাটালিয়ন আনসার আইন ১৯৯৫ দ্বারা। যা জাতীয় সংসদ কর্তৃক গৃহীত হলে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ তারিখে মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাভ করে এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ থেকে কার্যকর হয়। বর্তমানে প্রতি ইউনিয়নে ৩২ জনের একটি করে পুরুষ প্লাটুন, প্রতি উপজেলায় ৩২ জনের একটি মহিলা প্লাটুন এবং ১০০ জনের একটি করে পুরুষ কোম্পানি রয়েছে। শুরু থেকেই আনসারদের শৃঙ্খলা, অস্ত্র চালনা, দুর্যোগকালীন সেবা পদ্ধতি এবং সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আনসাররা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সেবামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে ।

২. আনসার ব্যাটালিয়ন : ১৯৭৬ সালে ১৮টি, ১৯৮০ সালে ৪টি, ১৯৮২ সালে ৬টি কোস্টাল আনসার ব্যাটালিয়ন, ১৯৮৪ সালে ২টি রোহিঙ্গা ব্যাটালিয়ন ১৯৮৮ সালে ১০টি, ২০০৪ সালে ২টি (১টি মহিলাসহ) এবং ২০০৮ সালে ২টি (১টি মহিলাসহ) মোট ৪৪টি ব্যাটালিয়ন গঠিত হয়। ১৯৯৪ সালের আনসার বিদ্রোহের প্রেক্ষিতে ৬টি ব্যাটালিয়ন নিষিদ্ধ এবং দায়িত্ব পালন শেষে ২টি রোহিঙ্গা ব্যাটালিয়ন বিলুপ্ত করা হয়। বর্তমানে সর্বমোট ৩৬টি পুরুষ ও ২টি মহিলা আনসার ব্যাটালিয়ন সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে। নারী সমাজের অগ্রায়ন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা রাখার সুযোগদান এবং সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে মহিলা ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়। মহিলা আনসার ব্যাটালিয়ন ২টি সার্ক এলাকার মধ্যে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত দেশের একমাত্র পেশাদার আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী মহিলা ব্যাটালিয়ন। ব্যাটালিয়ন আনসারদের উন্নত অস্ত্র চালনা ও যুদ্ধ কৌশল শিক্ষা দেয়া হয়। বর্তমানে ১৫টি ব্যাটালিয়ন (৬০৬০ জন আনসার) পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং বাকি ২৩টি ব্যাটালিয়ন (৯২৯২ জন আনসার) সমতল এলাকায় কর্মরত। র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-এর জনবলের ৪% ব্যাটালিয়ন আনসার এবং আনসার কর্মকর্তাদের দ্বারা পূরণ করা হয়।

৩। মহিলা আনসার : ১৯৭৬ সালে প্রথম মহিলা আনসার গঠন করা হয়, ২০০২-২০০৩ সালে উপজেলা মহিলা আনসার প্লাটুন গঠন হয়।

৪। আনসার ক্যাডার সৃষ্টি : ১৯৮০ সালে আনসার অফিসারদের জন্য আনসার ক্যাডার গঠন করা হয়, ১৯৮৪ সালের বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩০ জনকে বিসিএস (আনসার) ক্যাডারে নিয়োগ দেয়া হলে বিসিএস অফিসারগণ এ ক্যাডার সার্ভিসে যোগদান শুরু করেন।

৫। গ্রাম প্রতিরক্ষা দল প্রতিষ্ঠা : ৫ জানুয়ারি ১৯৭৬ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে গ্রাম প্রতিরক্ষা দল আইন ১৯৯৫ দ্বারা। প্রতি গ্রামে ৩২ জন পুরুষ ও ৩২ জন মহিলার একটি করে প্লাটুন রয়েছেআইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অস্ত্র চালনা এবং সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছা ভিত্তিতে নিজস্ব এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা, বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কাজে গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের সদস্য/সদস্যাগণ সর্বদা নিযুক্ত।

৭। ভিডিপি মহিলা : নারী প্রগতি এবং গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৮০ সালে গ্রাম প্রতিরক্ষা দলে মহিলাদের সদস্যা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

৮। পৌর প্রতিরক্ষা দল : ১৯৮০ সালে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী শহরে এবং পরবর্তীতে ২০০৪-২০০৫ সালে বরিশাল ও সিলেটে গঠিত হয়। এর গঠন, প্রশিক্ষণ ও দায়িত্ব পালন প্রক্রিয়া গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের অনুরূপ।

৯। বর্তমান সংখ্যা : সমগ্র দেশে ২,৯৩,০০০ সাধারণ আনসার রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৩০,০০০ জন আনসার বিভিন্ন সংস্থায় অঙ্গীভূত আছে। এছাড়া ভিডিপি সদস্য-সদস্যা রয়েছে প্রায় ৫৫ লক্ষ, যার অর্ধেকই মহিলা। ১০৷ জাতীয় পতাকা লাভ : দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দীর্ঘদিন প্রশংসনীয় অবদান রাখায় সরকার বাহিনীকে ১৯৯৮ সালের ১০মার্চ জাতীয় পতাকা প্রদান করেন।

১১। স্বাধীনতা দিবস পদক প্রাপ্তি : জাতীয় ক্রীড়ায় দীর্ঘদিন অসামান্য অবদান রাখায় সরকার ২০০৪ সালে বাহিনীকে স্বাধীনতা দিবস ক্রীড়া পদক প্রদান করে। যা ক্রীড়ার ক্ষেত্রে কোন বাহিনীর স্বাধীনতা পদক প্রাপ্তির পথ প্রদর্শক ও এখন পর্যন্ত একমাত্র উদাহরণ । 

১২। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় : আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অংশগ্রহণ এ বাহিনীর ১৪,৫৪৪ জন্য ব্যাটালিয়ন আনসার সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ-এর সাথে যৌথভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন আছে । প্রায় ৩০,০০০ অঙ্গীভূত আনসার সরকারি-বেসরকারি কেপিআই, কল-কারখানা, ব্রীজ, লঞ্চ- স্টিমার, বাস-ট্রেনসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে থাকে। এছাড়া দুর্গাপুজা, বিশ্ব ইজতেমা, নির্বাচন ইত্যাদি সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিপুল সংখ্যক সাধারণ আনসার মোতায়েন করা হয়।

১৩। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে অংশগ্রহণ : এ বাহিনীর কর্মকর্তা এবং ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছিল।

১৪। আনসার-ভিডিপির লোগো পরিচিতি : আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের ভিন্ন ভিন্ন লোগো তথা প্রতীক চিহ্নকে একীভূত করে নতুন রূপ দেয়া হয় ১৯৯৫ সালে। নতুন লোগোতে দৃশ্যমান বাংলাদেশের চিরন্তন সবুজের জমিনে উদীয়মান ভোরের লাল সূর্য উজ্জ্বল সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের আভা ছড়িয়ে দিচ্ছেসূর্যের শীর্ষে ‘পাঁচকোণা তারকা' এ সংগঠনের মর্যাদার প্রতীকী রূপ। সূর্যের নিচে ত্রিকোণাকৃতি ভিডিপি মেরুন রঙের ওপর আবহমান বাংলাদেশের কৃষিজ সংস্কৃতির মূল হাতিয়ার লাঙ্গল-কোদাল আর শিল্প উৎপাদনের কলের চাকা এ বাহিনীর সদস্যদের দেশের সার্বিক উৎপাদনে সম্পৃক্ততার স্বাক্ষর বহন করছে উভয় পার্শ্বের সোনালি পাতার বেষ্টনী প্রধান খাদ্যশস্য ধান আর প্রধান অর্থকরী ফসল পাটের প্রতীক এ সংগঠনের সদস্যদের কৃষিতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি বহন করেছে। সর্বনিম্নে রয়েছে জাতীয় ফুল শাপলার প্রতীক যা জাতীয় স্মারক বহনকারীর মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে এ সংগঠনকে ।